Skip to main content

তফা - খাদিজা আক্তার তানহা

 

আমার নাম সৃষ্টি । আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তফা। ভারি অবাক করা মেয়ে। আমি তফাকে যতো দেখেছি শুধু অবাকই হয়েছি। ওর মতো মেয়ে এখন খুব কমই দেখা যায়। জানিনা ওর মতো এমন একজন মানুষের সাথে কিভাবে বন্ধুত্ব হলো। ২০১৫ সালের কথা হঠাৎ বছরের মাঝে অক্সফোর্ড স্কুলে ক্লাস থ্রি তে একটি মেয়ে ভর্তি হয়। দেখতে অনেকটা অগোছালো তবে চেহারা দায়িত্ববোধের ছাপ রয়েছে।
সাধাসিধে স্বভাবের একটি মেয়ে।প্রথমদিন ক্লাসে ঢুকেই মুচকি হাসি দিয়ে, কথা নেই বার্তা নেই, আমার পাশে এসে বসে পড়লো। আমি চুপচাপ বসে আছি। ওর হাবভাব দেখে বুঝতে পেরেছি কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। তাই আমিই জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার নাম কি?" এই হল আমার ভুল। এরপর থেকে সে শুধু কথা বলেই যাচ্ছে! মজার বিষয় হলো তফা কথা যতই বেশি বলুক না কেন। ওর মনটা অনেক ভালো। স্বচ্ছ কাচের মত। লুকোচুরি বলতে কিছু নেই আর একটু বেশিই আবেগপ্রবণ।
কিছুদিনের মধ্যেই তফা আর আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। ওর কিছু কিছু কথা খুবই হাস্যকর। কথা বলার সময় মুখের অনেক অঙ্গভঙ্গি করে কথা বলে।
একদিন ইংরেজি ক্লাসে স্যার কিছুটা রাগ্ন্বিত হয়ে ক্লাসে ঢুকলেন। ইংরেজি ক্লাস নেন আবিদ স্যার, তিনি হলেন প্রচন্ড রগচটা স্বভাবের। তার মেজাজের পূর্বাভাস পাওয়া কঠিন। ক্লাসে এসেই বোর্ডে ইংরেজি ওয়ার্ড লিখতে শুরু করলেন। একটা করে ওয়ার্ড লিখছেন আর সবার দিকে তাকাচ্ছেন মনে হচ্ছে সবাইকে কাচা চিবিয়ে ফেলবেন।
লেখা শেষ করে এবার সবাইকে বললেন বোর্ডে লেখা শব্দগুলোর বাংলা অর্থ কে পারবে হাত তোলো। পুরা ক্লাসের মধ্যে একজনেরও হাত উঠছে না। হঠাৎ তফা হাত উঠিয়ে বললো, " স্যার, আমি পারবো।"
বলেই তফা বাংলা অর্থ বলতে শুরু করলো। স্যারতো এই বিষয়ে অনেক খুশী হলেন আর ওই দিন থেকেই স্যারের কাছে ভালো ছাত্রী উপাধি পেয়ে গেলো।
এরপর থেকে সব ক্লাসেই সঠিক উত্তর দিয়ে সেরা হয়ে উঠতে লাগলো।
তবে ওই যে বলেছিলাম আবেগপ্রবণ। এটাই তফার জন্য কাল হয়ে দাড়াল। ও আমাদের স্কুলের একটি ছেলের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়লো। এক অজানা মায়া অনুভব করতে লাগলো। ওর সাথে কথা না বলে এক মুহূর্তও দিবসের মতো লাগতো। কিন্তু বিষয় হচ্ছে ছেলেটি মোটেই সুবিধার না, বাজে স্বভাবের।
ছেলেটির তফা নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ কমিয়ে দিলো। ফলাফল ফাইভের পরীক্ষায় ফলাফল আশাব্যঞ্জক হলো না।
দেখতে দেখতে স্কুল ছেড়ে যাওয়ার সময় হলো। ক্লাস নাইনে সবাই আলাদা আলাদা স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলো।
আমি তফার সাথে যোগাযোগ রাখার অনেক চেস্টা করেছিলাম, কিন্তু পড়ে আর ওর সাথে তেমন কথা হতো না।
.......
ক্লাস টেনে আমি এক বায়োলজি কোচিং -এ ভর্তি হই। অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমি তফাকে সেখানে খুঁজে পাই। আমি ওকে দেখেই খুশিতে এলাহি কান্ড। কিন্তু ও আমাকে দেখেও কেমন যেন না দেখার ভান করলো। কোচিং ছুটি হওয়ার পর আমি ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "আমাকে চিনতে পেরেছিস?"
"সৃষ্টি!", বলেই মুচকি হাসি দিল। তারপর ওর সাথে অনেক কথা হলো। ওর সাথে কথা বলে আমার মনে হলো ও যেন আগের মত নেই। এখন কথা বার্তায় অনেক পরিণত আর গোছানো স্বভাবের হয়ে গেছে। আর অনেক সুন্দরীও হয়ে গেছে! ওর আশেপাশে অনেক ছেলে ঘোরাঘুরিও করে তবে ও এসব আর পাত্তা দেয় না। ও নিজের পড়াশোনা আর জীবন সম্পর্কে অনেক সচেতন হয়ে গেছে। তবে তফা বলেছে একজন আছে যাকে ঘিরে সে নিজের জীবনকে গড়ার স্বপ্ন দেখে তবে তাকে বলতে পারে না। যদি স্বপ্নটা দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। তাই সে নিজেকে গড়তেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
−−−−−−−−−−−−−−
➤ কম্পিউটার কম্পোজ্ড - খাদিজা আক্তার তানহা (লিজা)
➤ ব্যবস্থাপনায় - খাদিজা আক্তার তানহা (লিজা), সাফিয়া আলী ইল্লিন, নাবিল রাইয়ান, রাকিবুল হাসান সিয়াম

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

অঙ্কে কাঁচা - রিয়াদ আলম তামিম

কে বলে অঙ্কে আমি কাঁচা, অঙ্কে আমি হিরো। বরাবরই পেয়ে থাকি বড় বড় জিরো। বীজগনিতে অতি পাকা, শুধু সূত্রে ভুল। পাটিগণিত করতে বসলে, উঠে আমার চুল। ত্রিকোণ্মিতি অতি সহজ, পরিমিতি আঁকতে হয় দেরি। সম্পাদ্য যেমন তেমন, উপপাদ্যে ঠেলাগাড়ি। গণিত নিয়ে নেইতো, আমার কোনো ভয়। যত লিখিবে, তত পারিবে, হবেই, হবে, জয়! −−−−−−−−−−−−−− ➤ কম্পিউটার কম্পোজ্ড - মোঃ সাকিবুল হক ➤ ব্যবস্থাপনায় - খাদিজা আক্তার তানহা (লিজা), সাফিয়া আলী ইল্লিন, নাবিল রাইয়ান, রাকিবুল হাসান সিয়াম  

গল্প - একতরফা হিসাব | লেখক - অতিশয় স্পর্শকাতর

  কয়েক দিন ধরে রাস্তায় হাটতে হাটতে থেমে যেতে হয়। বুকের ভেতর হঠাৎ ধড়ফড় শুরু হয় আর এক গভীর ব্যাথা শুরু হয়। ব্যাথাটা বেশি সময় থাকে না। হঠাৎ বুকের ভেতর ধড়াস করে ওঠে আবার চলে যায়। ডাক্তার দেখিয়েছি অনেকবার কিন্তু কোনো রোগ ধরা পড়ে না।  এসব বলেই চায়ের কাপটা নামিয়ে জাহিদ বললো, "আমি যাই রে!" আমি বল্লাম, "হঠাৎ চলে যাবি কেন? অনেকদিন পড় দেখা হলো আরো কিছু সময় আড্ডা দে, তারপর না হয় যা।" - না দোস্ত, বাসায় কিছু কাজ আছে মা গত এক সপ্তাহ ধরে বলছিল সিড়িঘরের লাইট টা বদলাতে, ফিউজ হয়ে গেসে। রাতে বাবার অন্ধকারে সিড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হয়ে যায়।  এই বলে, জাহিদ চায়ের দোকান থেকে বাসার দিকে বড় বড় পা ফেলে রওনা হলো।  আমার কাছে বিষয়টা অদ্ভুত লাগলো। যদিও ওর সাথে অনেক পরে দেখা, তারপরও মনে হলো কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে ওর সাথে। এই ছেলেতো আগে এমন ছিলো না। আগে অনেক স্বতঃস্ফূর্ত ছিল,  আড্ডায় বসলে সহজে উঠতো না। এখন এমন কি হলো যে সে এতো বাসায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উটলো। ভাবলাম রাতে বাসায় যেয়ে ওর সাথে কল দিয়ে কথা বলতে হবে। এখন রাত ১১ টার মতো বাজে। জাহিদকে একবার,  দুইবার করে পর পর তিন বার কল দিলাম। কল ধরার...