Skip to main content

গল্প - একতরফা হিসাব | লেখক - অতিশয় স্পর্শকাতর

 


কয়েক দিন ধরে রাস্তায় হাটতে হাটতে থেমে যেতে হয়। বুকের ভেতর হঠাৎ ধড়ফড় শুরু হয় আর এক গভীর ব্যাথা শুরু হয়।

ব্যাথাটা বেশি সময় থাকে না। হঠাৎ বুকের ভেতর ধড়াস করে ওঠে আবার চলে যায়। ডাক্তার দেখিয়েছি অনেকবার কিন্তু কোনো রোগ ধরা পড়ে না। 

এসব বলেই চায়ের কাপটা নামিয়ে জাহিদ বললো, "আমি যাই রে!"

আমি বল্লাম, "হঠাৎ চলে যাবি কেন? অনেকদিন পড় দেখা হলো আরো কিছু সময় আড্ডা দে, তারপর না হয় যা।"

- না দোস্ত, বাসায় কিছু কাজ আছে মা গত এক সপ্তাহ ধরে বলছিল সিড়িঘরের লাইট টা বদলাতে, ফিউজ হয়ে গেসে। রাতে বাবার অন্ধকারে সিড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হয়ে যায়। 

এই বলে, জাহিদ চায়ের দোকান থেকে বাসার দিকে বড় বড় পা ফেলে রওনা হলো। 

আমার কাছে বিষয়টা অদ্ভুত লাগলো। যদিও ওর সাথে অনেক পরে দেখা, তারপরও মনে হলো কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে ওর সাথে। এই ছেলেতো আগে এমন ছিলো না। আগে অনেক স্বতঃস্ফূর্ত ছিল,  আড্ডায় বসলে সহজে উঠতো না। এখন এমন কি হলো যে সে এতো বাসায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উটলো।

ভাবলাম রাতে বাসায় যেয়ে ওর সাথে কল দিয়ে কথা বলতে হবে।

এখন রাত ১১ টার মতো বাজে। জাহিদকে একবার,  দুইবার করে পর পর তিন বার কল দিলাম। কল ধরার কোনো লক্ষ্মণ নেই। কিছুক্ষণ পড় সে নিজেই কল ব্যাক করলো।

কল রিসিভ করতেই,

-সজীব, দোস্ত! আমার ফোন সাইলেন্ট ছিল তাই রিসিভ করতে পারি নি। ফোন দিয়েছিলি কেনো?

- আচ্ছা, তোর কি হইছে বলতো! 

- কিছু হয় নি, I am just shattered! 

- Are you serious! তোর কিছু হয় নাই, আর তুই বলতাছিস, "Shattered"


[অনেক বাকবিতন্ডার পরে জাহিদ এবার তার খোলসটা খুলতে শুরু করলো।]

সজীব দোস্ত জানিস এই দুনিয়ায় অনেস্টি, লয়ালটির কোনো দাম নাই।

আমি জাহিদকে থামিয়ে, " এই দাড়া কোনো মেয়ে কেইস নাকি!"

জাহিদ কিছুটা বিরক্ত হয়ে, " তুই জানতে চেয়েছিস তাই বলছি, এইসব টিটকারি করবিনা আমার সাথে।"

আমি বল্লাম, " আচ্ছা, সরি, দোস্ত ঘটনা সামনের দিকে আগা।"

মেয়েটা আমার থেকে ২ বছরের জুনিয়র, নাম অনিন্দিতা। ওর চেহারায় এক ধরনের স্নিগ্ধতা ছিল। ভার্সিটির ফিল্ম ক্লাবে কাজ করার সময় ওর সাথে পরিচয়। ওর স্কুল, কলেজ ছিল ঢাকার বাহিরে। ভার্সিটির জন্য ঢাকায় ফুফুর বাসায় থাকতো। 

একবার একটা ওয়ার্কশপের ভলান্টারি দায়িত্ব পড়লো আমাদের দুই জনের ওপর। অনিন্দিতা আর আমি এক টিম। তখনই ওর সাথে একটা ভালো খাতির হয়ে যায়। মেয়েটা অনেক বেশি ঠান্ডা মাথার মানুষ ছিল। কথা অনেক হিসাব করে বলতো। ওকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তুমি কিছু করার আগে এত ভাবো কেনো। ও বলেছিলো যে ওর আব্বু বলেছে ঢাকায় যাচ্ছিস অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলবি। এভাবে ভালোই চলছিল দিনকাল, ওর কোনো কাজ থাকলে ক্যাম্পাসে এসে আগে আমাকে খোঁজ করতো। আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, সমস্যা হলো আমি ওর প্রতি কিছুটা  দূর্বল হয়ে পড়েছিলাম মানসিক ভাবে। বলতে পারিস ওর মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। যদিও তার সাথে আমার শুধু বন্ধুত্ব ছিলো। কিন্তু মনে মনে আমি ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম। যখন ও অন্যকোনো ছেলের সাথে কথা বলতো, আমি কোনো ভাবেই মানতে পারতাম না। ওর সাথে এত ভালো বন্ধুত্ব ছিলো যে, আমি যে তাকে ভালোবাসি সেটা বলে উঠতে পারছিলাম না। ওর সাথে যখন থাকতাম নিজেকে তখন পরিপূর্ণ মনে হতো, মনে দুনিয়ায় আমার চেয়ে সুখী আর কেউ নাই। 

এই সুখের মাঝেই হঠাৎ ওর বাড়ি থেকে খবর আসলো ওর বাবা অনেক অসুস্থ। ও সেমিস্টারের মাঝেই বাড়ি চলে গেলে। ১ মাস,  ২ মাস করে ৩ মাস হয়ে গেলো ওর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফোন করেছি, যাকে যেখানে পেয়েছি ওর খোঁজ করতে লাগিয়ে দিয়েছি কিন্তু ওর কোনো খোঁজ মেলেনি। এই দিকে আমার পাগলপ্রায় অবস্থা। এভাবে কেটে গেলো ৮ টি মাস। একদিন ক্যাফেটেরিয়ায় বসে আছি হঠাৎ এক ফ্রেন্ড বলে উঠলো আরে অনিন্দিতা ক্যাম্পাসে। আমি কিছুটা অস্থির হয়ে কোথায়! 

- ওই যে ডান দিকে তাকা নীল রঙের শাড়ী পড়ে। 

আমি দেখে আকষ্মিক আনন্দে পাথর হওয়ার মত অবস্থা, ও আর আগের মত নেই। সাথে একজন অচেনা ব্যক্তি। মিলি,  অনিন্দিতার কাছে থেকে কি জানি শুনলো, তারপর বললো, " আরে! আনিন্দিতা বিয়ে করে ফেলেছে!!"

আমার মনে হলো কেউ বুকের ওপর একটা পাথর রেখে দিয়েছে...

(বাকীটা শেষ পর্বে - ২য় পর্বে) 

−−−−−−−−−−−−−−

➤ কম্পিউটার কম্পোজ্ড - মোঃ সাকিবুল হক

➤ ব্যবস্থাপনায় - খাদিজা আক্তার তানহা (লিজা), সাফিয়া আলী ইল্লিন, নাবিল রাইয়ান, রাকিবুল হাসান সিয়াম

Comments

Popular posts from this blog

অঙ্কে কাঁচা - রিয়াদ আলম তামিম

কে বলে অঙ্কে আমি কাঁচা, অঙ্কে আমি হিরো। বরাবরই পেয়ে থাকি বড় বড় জিরো। বীজগনিতে অতি পাকা, শুধু সূত্রে ভুল। পাটিগণিত করতে বসলে, উঠে আমার চুল। ত্রিকোণ্মিতি অতি সহজ, পরিমিতি আঁকতে হয় দেরি। সম্পাদ্য যেমন তেমন, উপপাদ্যে ঠেলাগাড়ি। গণিত নিয়ে নেইতো, আমার কোনো ভয়। যত লিখিবে, তত পারিবে, হবেই, হবে, জয়! −−−−−−−−−−−−−− ➤ কম্পিউটার কম্পোজ্ড - মোঃ সাকিবুল হক ➤ ব্যবস্থাপনায় - খাদিজা আক্তার তানহা (লিজা), সাফিয়া আলী ইল্লিন, নাবিল রাইয়ান, রাকিবুল হাসান সিয়াম  

তফা - খাদিজা আক্তার তানহা

  আমার নাম সৃষ্টি । আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তফা। ভারি অবাক করা মেয়ে। আমি তফাকে যতো দেখেছি শুধু অবাকই হয়েছি। ওর মতো মেয়ে এখন খুব কমই দেখা যায়। জানিনা ওর মতো এমন একজন মানুষের সাথে কিভাবে বন্ধুত্ব হলো। ২০১৫ সালের কথা হঠাৎ বছরের মাঝে অক্সফোর্ড স্কুলে ক্লাস থ্রি তে একটি মেয়ে ভর্তি হয়। দেখতে অনেকটা অগোছালো তবে চেহারা দায়িত্ববোধের ছাপ রয়েছে। সাধাসিধে স্বভাবের একটি মেয়ে।প্রথমদিন ক্লাসে ঢুকেই মুচকি হাসি দিয়ে, কথা নেই বার্তা নেই, আমার পাশে এসে বসে পড়লো। আমি চুপচাপ বসে আছি। ওর হাবভাব দেখে বুঝতে পেরেছি কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। তাই আমিই জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার নাম কি?" এই হল আমার ভুল। এরপর থেকে সে শুধু কথা বলেই যাচ্ছে! মজার বিষয় হলো তফা কথা যতই বেশি বলুক না কেন। ওর মনটা অনেক ভালো। স্বচ্ছ কাচের মত। লুকোচুরি বলতে কিছু নেই আর একটু বেশিই আবেগপ্রবণ। কিছুদিনের মধ্যেই তফা আর আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। ওর কিছু কিছু কথা খুবই হাস্যকর। কথা বলার সময় মুখের অনেক অঙ্গভঙ্গি করে কথা বলে। একদিন ইংরেজি ক্লাসে স্যার কিছুটা রাগ্ন্বিত হয়ে ক্লাসে ঢুকলেন। ইংরেজি ক্লাস নেন আবিদ স্যার, তিনি হলেন প্রচন্ড রগচট...